সা'দ ফিতনাহর বিরুদ্ধে ওয়াজাহাতী ওলামা জোড়-২৮-০৭-২০১৮- মুফতি মনসুরুল হক সাহেব (দাঃবাঃ)
ঐতিহাসিক ছয় সিদ্ধান্তে সমাপ্ত হয়
উলামায়ে কেরাম ও তাবলিগি সাথীদের ওযাহাতি জোড়।
-----------------------
গৃহিত ৬ টি সিদ্ধান্ত
১. জমহুর উলামায়ে কেরাম একমত হয়েছেন, তিনটি মৌলিক কারণে- (ক) কোরআন ও হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা, (খ) তাবলিগের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে তাবলিগ ব্যতীত দ্বীনের অন্যান্য মেহনতকে যথা দ্বীনি শিক্ষা ও তাসাউফ ইত্যাদিকে হেয়প্রতিপন্ন করা।
(গ) পূর্ববর্তী তিন হজরতজি (হজরত মাওলানা ইলিয়াস রহ., হজরত মাওলানা ইউসুফ রহ, ও হজরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ. এর উসুল ও কর্মপন্থা থেকে সরে যাওয়ার কারণে বর্তমানে মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবকে অনুসরণ করা সম্পূর্ণভাবে বর্জনীয় ও নিষিদ্ধ।
২. মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেব হজরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ. এর রেখে যাওয়া শুরায়ী নেযামকে উপক্ষো করে নিজেই নিজেকে আমীর দাবি করেছেন; যা শরিয়ত বিরােধী। তাই তার কোনােরূপ সিদ্ধান্ত-ফায়সালা বা নির্দেশ কাকরাইল তথা বাংলাদেশে বাস্তবায়িত করা যাবে না।
৩. দারুল উলুম দেওবন্দ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেব আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ থেকে সরে গিয়ে নতুন কোনাে ফেরকা গঠনের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এহেন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কোনাে জামাত বা ব্যক্তিকে নেযামুদ্দিনে পাঠানাে বা যাওয়া মুনাসিব হবে না।
অনুরূপভাবে নেযামুদ্দিন থেকে আগত কোনাে জামাতকে বাংলাদেশের কোনো জেলায়/থানায় ইউনিয়নে কাজ করার সুযােগ দেওয়া যাবে না।।
৪. হজরত মাওলানা ইলিয়াস রহ., হজরত মাওলানা ইউসুফ রহ. ও হজরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ এর বাতানাে পদ্ধতিতে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ সারা দুনিয়াতে সমাদৃত ও গৃহীত হয়েছে।
তাই বাংলাদেশের তাবলিগের কাজ পূর্ববর্তী এই তিন হজরতের পদ্ধতিতে এবং উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। নতুন কোনাে পদ্ধতি চালু করা যাবে না। কাকরাইল, টঙ্গী ময়দান এবং জেলা মারকাযসহ সকল মারকায এই নীতিতেই পরিচালিত হবে।
৫. কাকরাইল মসজিদের যে সমস্ত শুরা সদস্য আমরণ মাওলানা মুহাম্মদ সাদ সাহেবের ভ্রান্ত আকিদা অনুসরণের হলফনামা করেছেন যা শরিয়ত পরিপন্থি- তারা শুরার সদস্য থাকার যােগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন।
অতএব, তাদেরকে তাবলিগের কাজে শুরা ও ফায়সাল না রাখার আহ্বান জানানাে যাচ্ছে ।
৬. ২০১৮-এ টঙ্গী ইজতেমায় সরকারের সাথে পরামর্শক্রমে আগামী ২০১৯-এর টঙ্গী ইজতেমার জন্য নির্ধারিত তারিখ- প্রথম পর্ব ১৮, ১৯, ২০ জানুয়ারি ও দ্বিতীয় পর্ব ২৫, ২৬, ২৭ জানুয়ারি এর সাথে আজকের মজমা ঐকমত্য পোষণ করছে।
উপরোক্ত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে এবং বর্তমানে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজে সুষ্ঠ বিশৃঙ্খলা রােধে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামানা করছে।
শনিবার (২৮ জুলাই) রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে তাবলিগ জমাতের সংকট নিরসনে ওয়াজাহাতি জোড় অনুষ্ঠিত হয়।
জোড়ে জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগ মাদরাসার প্রিন্সিপাল পীরে কামেল আল্লামা আশরাফ আলী, জামিয়া বারিধারার মুহতামিম আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, কিশোরগঞ্জ জামিয়া ইমদাদিয়ার মুহাতামিম আল্লামা আজহার আলী আনোয়ার শাহ, শাইখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ, জামিয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক, লালবাগ জামিয়ার মুহাদ্দিস মুফতি ফয়জুল্লাহ, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রধান মুফতি, মুফতি এনামুল হকসহ বাংলাদেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম উপস্থিত রয়েছে।
সবশেষে বাংলাদেদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বয়ান ও দোয়ার মাধ্যমে দুপুর ১ টায় জোড় শেষ হয়।
জোড় উপলক্ষ্যে সারা দেশের হাজার হাজার উলামায়ে কেরাম ও তাবলীগের সাথীগণ মোহাম্মদপুরের কবরস্থান মাঠে উপস্থিত হন। বৃষ্টি উপেক্ষা করেন মাঠের চারপাশে প্রায় ১ কিলোমিটার ব্যাপী ধর্মপ্রাণ মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে।
তাবলীগের চলমান সঙ্কট নিরসন ও মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও উলামায়ে কেরামের অবস্থান পরিস্কার করতে মূলত এ সম্মেলনের আয়োজন করেন উলামায়ে কেরাম। জোড় শেষে উলামায়ে কেরামের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের সবাই ঐক্যমত পোষণ করেন।
Comments
Post a Comment